কমছে মোবাইল ফোনের প্যাকেজ সংখ্যা!

বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর চালু প্যাকেজের সংখ্যা অগণিত। সংশ্লিষ্টদের ধারণা মতে, ভয়েস ও ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনও আছে, একটি অপারেটরের প্যাকেজ সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এসব প্যাকেজ কতটা উপকারী, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বরং বেশুমার প্যাকেজ কমিয়ে মোবাইল ব্যবহারকারীদের একটু স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া যায় কিনা, সেসব উপায় খোঁজা হচ্ছে।

একইসঙ্গে ভয়েস বা ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর ক্ষেত্রে তিন-চার বার ‘বাটন প্রেস’ পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা, তা-ও ভাবা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে কোনও প্যাকেজ চালুর ক্ষেত্রে অন্তত দুই বার মোবাইল ফোনের বাটন প্রেস বা স্পর্শ করতে হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনও প্যাকেজ চালুর সুযোগ নেই। তারপরও মোবাইল ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি দূর করতে সহজে প্যাকেজ চালুর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, মোবাইল ফোনে কোনও প্যাকেজ গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে চালু হয়ে যায়, তা মূলত ব্যবহারকারীর অজ্ঞতা বা মেসেজ না পড়ে ‘ইয়েস’ বাটন চাপার কারণে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘একেকটা মোবাইল ফোন অপারেটরের ইন্টারনেট ও ভয়েসের শতাধিক প্যাকেজ রয়েছে। প্যাকেজের সংখ্যা সহস্রাধিকও হতে পারে। এটা গ্রাহকদের জন্য বড়ই সমস্যার। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা উদ্যোগী হবো। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে প্যাকেজগুলো কতটা প্রয়োজনীয়।’ অপ্রয়োজনীয় প্যাকেজগুলোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এজন্য সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘তবে গ্রাহকদের সমস্যা যাতে করে আর না বাড়ে, সেটা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’

এর আগে গত বছর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ মোবাইল ফোন সেবায় বর্তমানে বিদ্যমান প্যাকেজের সংখ্যা কত, তা জানতে চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছিল- অপারেটরগুলোর মোট প্যাকেজ, অনুমোদনহীন প্যাকেজের সংখ্যা, যেসব প্যাকেজ অটো-রিনিউ হয়, সেসব প্যাকেজের তালিকা এবং গ্রাহকের সমস্যা হয় এমন কী কী সেবা বিদ্যমান আছে যেগুলো গ্রাহকরা বুঝতে পারেন না। চিঠির জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনের অপারেটরগুলোর বাজারে ছাড়া ভয়েস ও ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো কমানোসহ গ্রাহকবান্ধব কিছু নির্দেশনা জারির উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চালু বিভিন্ন প্যাকেজ সুবিধার বদলে গ্রাহককের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। হাজারো প্যাকেজ চালু থাকায় গ্রাহকের পক্ষে তা মনে রাখাও মুশকিল। অন্যদিকে,সঠিকভাবে জানা না থাকায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্যাকেজ চালু (অটো-রিনিউ) হওয়ায় গ্রাহকের অজ্ঞাতে মোবাইল ব্যালেন্স থেকে টাকা কাটা যায়। গ্রাহককে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই এই হাজারও প্যাকেজ সীমিত করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘মোবাইলে কোনও প্যাকেজ অটো চালু হয় না। যেটা হয় তা হলো-গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে এবং ইংরেজি বুঝতে না পারার কারণেও অনেক সময় সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় গ্রাহক বুঝতে না পেরে এই বাটন সেই বাটন চাপার কারণেও তা হতে পারে।’ তিনি জানান, সাধারণত ফিচার বা বারফোনে সমস্যা কম হয়। তবে গ্রাহকের বুঝবার সমস্যার কারণেও এ ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। স্মার্টফোনে অনেক সময় স্পর্শ লাগলেও প্যাকেজের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘যে কোনও প্যাকেজ সাধারণত একবারে চালু হয় না। এজন্য অন্তত দুবার বাটন চাপতে হয় বা স্মার্টফোনে স্পর্শ করতে হয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘যে গ্রাহক কোনও মেসেজ এলে পড়ে দেখেন না, তিনি কোনও প্যাকেজ চালুর ক্ষেত্রে তিন বা চার বার বাটন চাপতে হলেও চাপবেন না। ফলে কোনও প্যাকেজ চালুর জন্য তিন-চার বার বাটন চাপার বিষয়টি কতটা যুক্তিযুক্ত হবে সেটা ভেবে দেখতে হবে।’ তবে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দেন এই কর্মকর্তা। সফল হলে তা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। বরং প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে গ্রাহককে বিভ্রান্তির হাত থেকে আগে রক্ষা করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ভয়েস ও ইন্টারনেট মিলিয়ে প্যাকেজের সংখ্যা ২০-২৫টির বেশি হওয়া উচিত নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর